বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মানবতার কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। আমাদের প্রধান লক্ষ্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। জামায়াত প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন জালিম সরকার আদর্শিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে জামায়াতের উপর সীমাহিন জুলুম নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সকল জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা করে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম চলছে চলবে। স্বাধীনতার পর প্রথম এই আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্র হত্যা করে। তারপর এরশাদ সরকার গণতন্ত্র হত্যা করে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। আর এখন আওয়ামী লীগ অতীতের সকল স্বৈরাচারী সরকারকে ছাড়িয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে। অতীতের গণতন্ত্র হত্যাকারী আবার একজোট হয়ে একতরফা নির্বাচনে মেতে উঠেছে।
তিনি বুধবার স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত প্রফেসর মুজিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে গণতন্ত্রের উপর আঘাত এসেছে। আজকের ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে বাকশাল কায়েম করেছিল। সেই তারাই নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের দাবীতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণের মাধ্যমে বিরোধীমত দমনে কাজ করছে। আদালতের প্রতিটি রায় সরকার থেকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দিনের পাশাপাশি এখন রাতেও কোর্ট চলছে। উদ্দেশ্য একটাই বিরোধী মতের রাজনীবিদদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২ বছরের সাজা দিতে হবে। কারণ তাদেরকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। বিচারের নামে এসব অবিচার জাতি বরদাশত করবেনা।
তিনি আরো বলেন, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ারসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ভুয়া মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ফরমায়েসী সাজা দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের গণগ্রেফতার, খুন-গুম জুলুম নিপীড়ন ৭১ এর নিপীড়নকেও হার মানাচ্ছে। জামায়াতের নিবন্ধন মামলাকে খারিজ করে দিয়ে আইন ও মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করা হয়েছে। এভাবে কোন দেশ চলতে পারেনা। ফ্যাসিস্ট সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। এজন্য ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ন্যায় দেশপ্রেমিক জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ইতিহাস স্বাক্ষী সকল স্বৈরাচারী সরকারকে কঠোর পরিনতি বরণ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের জন্যও করুণ পরিনিতি অপেক্ষা করছে। কতিপয় অর্থলোভী অখ্যাত রাজনৈতিক লোককে দিয়ে ভূঁইফোড় মৌসুমি দল তৈরি করে ২০১৪ ও ২০১৮ এর মতো নির্বাচনের নামে আরও একটি প্রহসনের ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র জাতি সফল হতে দিবেনা। স্বৈরাচারী বাকশালী সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অতীতের মতো বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকেও বিদায় নিতে হবে। চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তিকে অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ইতিহাস স্বাক্ষী আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র একসাথে চলেনা। যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছে, ততবারই গণতন্ত্রের উপর আঘাত এসেছে। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে আবারো একদলীয় বাকশাল কায়েমের ষড়যন্ত্র করছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতেই তারা ফরমায়েসী তফসিল ঘোষণা করে একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সর্বস্তরের জনশক্তিকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জামায়াত ছিল আছে এবং থাকবে।
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব ও ড. নূরুল ইসলাম বাবুল প্রমূখ। আলোচনা সভায় মহানগর, থানা দায়িত্বশীল ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের ২ শতাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।