বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কুরআন, জামায়াতের নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (র.) আজীবন কুরআনের বাণী প্রচার ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসী সাজা দিয়ে সরকার তাঁকে দীর্ঘ ১৩টি বছর কারাগারে আটকে রেখে অবহেলায় করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। জীবিত থাকাবস্থায় আল্লামা সাঈদীর উপর বিচারের নামে অবিচার করা হয়েছে, এমনকি মৃত্যুর পর তার লাশের সাথেও নিষ্টুর আচরণ করেছে। শুধু আল্লামা সাঈদী নয়, আমাদের সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে। এসব অবিচারের বিচার বাংলার মাটিতে হওয়া উচিত। যাতে আর কোন নিরপরাধ মানুষ এভাবে বিচারিক জুলুমের শিকার না হন। আল্লামা সাঈদী সারা বাংলাদেশে তথা গোটা বিশ্বে কুরআনের তাফসীর করেছেন, কুরআনের আলোকে জীবন গঠনে কাজ করেছেন, কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি শুক্রবার রাতে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রাহি.) এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, আল্লামা সাঈদী পুত্র ও সাবেক ইন্দুরকানি উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরো বলেন, জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় আইন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু সরকার রাষ্ট্রীয় ও দলীয় শক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের নেতৃবৃন্দকে শহীদ করেছে। জীবনের শেষ মুহুর্তে আল্লামা সাঈদীর চিকিৎসা নিয়ে জাতি আজ সন্দিহান। কারণ যে চিকিৎসক আল্লামা সাঈদীর ফাসির দাবীতে শাহবাগে আন্দোলন করেছে। সে যদি এই আসামীকে তার হাতে পায় খুন করতে দ্বিধা করবেনা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। আল্লামা সাঈদীকে শহীদ করে এদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করা যাবেনা।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ হয়েছে। এভাবে মুসলিম বিরোধিতা দিয়েই আজকের আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে। কিন্তু তারাই প্রথম গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে বাকশাল কায়েম করেছে। এর ফলে দীর্ঘদিন তারা ক্ষমতার বাইরে ছিল। দীর্ঘ ২৫ বছর পর ফের ক্ষমতায় গিয়ে তারা আবার গণতন্ত্রকে হত্যা করলো। কারণ তারা আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দেশপ্রেমিক জনতা আজ ঐক্যবদ্ধ। আল্লামা সাঈদী কুরআন তেলাওয়াত করেছেন, নিজে বুজেছেন ও মানুষকেও বুঝিয়েছেন। আমাদেরকেও কুরআন পড়তে হবে, কুরআন বুঝতে হবে ও মানুষকে কুরআন বুঝাতে হবে। এভাবেই কুরআনের সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে। শহীদ করে ইসলামী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবেনা। আল্লামা সাঈদীসহ আমাদের শহীদদের রেখে যাওয়া দ্বীনি কাজ আঞ্জামের মাধ্যমে তাদের শাহাদাতের বদলা নেয়া হবে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, সিলেট জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনওয়ার হোসাইন খান, সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদ, সহকারী সেক্রেটারী ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল মুকিত, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরী সভাপতি সিদ্দিক আহমদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোঃ মিসবাহুল করিম প্রমূখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মুফতী আলী হায়দার।