জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, দেশ জাতির ক্রান্তিলগ্নে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রেজিস্টারি মাঠে আগামী ২১ জুলাই শুক্রবার সিলেট মহানগর জামায়াতের শান্তিপূর্ণ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণ জনসভা সফলে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ, সিলেটবাসী ও স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি ।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর বন্দরবাজারস্থ সংগঠনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। ১৫ জুলাই শুক্রবার নগরীর রেজিস্টারি মাঠে সিলেট মহানগর জামায়াত ঘোষিত জনসভা পুলিশ কর্তৃক অনুমতি না দেয়ার প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, মহানগর নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদ, সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, জেলা উত্তরের সেক্রেটারী জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব ও জেলা দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী সাইফুল্লাহ আল হোসাইন প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্যে সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে আমাদের শান্তিপূর্ণ জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি। অথচ সভা সমাবেশ করা সকল দলের সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমাদের সেই অধিকারকে দীর্ঘদিন থেকে হরণ করা হয়েছে। আমাদের নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় বিচারের নামে ফাসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে, কারাগারে রেখে বিনা বিচারে মৃত্যুর মূখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আমীরে জামায়াত সিলেটের কৃতি সন্তান ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ার, সিলেটের কৃতি সন্তান জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে। বিশ^বরণ্যে আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা মামনুল হক, মুফতী আমির হামযাসহ অনেক আলেম-উলামাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে বিরোধী দলীয় সকল রাজবন্দী ও আলেম-উলামার নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানাচ্ছি। দফায় দফায় তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে জনগণের নিকট জবাবদিহীমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এই অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সময়ের দাবী। জনগণ ১৪ সাল মার্কা বিনাভোটের এমপির নির্বাচন ও ১৮ সাল মার্কা দিনের পরিবর্তে গভীর রাতের ভোটের সরকার চায়না। জনগণের ভোটের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ ও জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। এলক্ষ্যে সিলেট মহানগর জামায়াত আগামী ২১ জুলাই (শুক্রবার) একই স্থানে শান্তিপূর্ণ জনসভার আয়োজন করতে যাচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী বাস্তবায়নে জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করছি। একই সাথে স্থানীয় প্রশাসনের একান্ত সহযোগিতা কামনা করছি। সিলেটের জনগণ উক্ত জনসভাকে শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে এগিয়ে আসবেন আমরা প্রত্যাশা করছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ এক যুুগের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে মাঠের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করতে দেয়া হচ্ছেনা। এরপরও জামায়াত দেশ, জাতি ও ইসলামের স্বার্থে ও আর্ত-মানবতার কল্যাণে রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে সদা সক্রিয় রয়েছে। চলতি মাসের ৫ জুলাই সিলেট মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে আজ ১৫ জুলাই সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে জনসভা আয়োজনের লক্ষ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনে শান্তিপূর্ণ জনসভা সফলে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করা হয়। সেই লক্ষে সিলেট মহানগরীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রচারণা চালানো হয়। আমাদের পক্ষ থেকে বুধবার (১২ জুলাই) এসএমপি কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। তখনো আমাদেরকে অনুমতি দেয়া হবেনা বলে কোন কিছু জানানো হয়নি বরং আমরা এই বলে আশ^স্ত হই যে আমাদের আবেদন সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে মৌখিকভাবে আমাদেরকে বলা হয় জনসভার অনুমতি হচ্ছেনা। পুলিশের এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতভম্ব হই এই কারণে যে কিসের ভিত্তিতে আমাদের জনসভা করতে দেয়া হয়নি এব্যাপারে আমাদেরকে কোন কিছু বলা হয়নি। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য করলাম পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে নাশকতার আশঙ্কা থেকে নাকি অনুমতি দেয়া হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতেও আমাদের সমাবেশ নিয়ে এরুপ আশঙ্কা করেছিল পুলিশ। কিন্তু জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে সেই সমাবেশ সফলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে নাশকতার সাথে জামায়াতের কোন সংশ্লিষ্টতা কখনো ছিলনা, বর্তমানেও নেই, ভবিষ্যতেও এই রকম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, জামায়াত দেশ জাতির কঠিন সময়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে আসছে। ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা, নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, গুমকৃত সকল ব্যক্তিদের অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া, নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত হাজার হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা ও মহানগরীর সকল দলীয় কার্যালয় অবিলম্বে খুলে দেয়া, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও মুক্তি না দিয়েও জেলে আটক রাখার বেআইনী, অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থী কর্মকান্ড বন্ধ করা, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির পরিবর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে বার বার হয়রানী করা, এমনকি কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডের নামে অমানবিক নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১০ দফা দাবীতে জামায়াত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও মহানগর এলাকায় সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটে জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। যা পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় শনিবারের আহ্বানকৃত জনসভা হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি মজলুম সংগঠন। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে গঠনমূলক ভুমিকা পালন করেছেন। জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে জামায়াত আর্ত মানবতার কল্যাণে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র, আইন ও মানবাধিকারের পক্ষে জামায়াত সবসময় শক্তিশালী ভুমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানেও জাতির ক্রান্তিলগ্নে জামায়াত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে আছে। নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও কারান্তরীণ আলেম-উলামাদের মুক্তি, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি রোধ, ঘন ঘন লোডশেডিং, দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ¦ালানীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ, বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা ও পাচারকারীদের শাস্থি প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সাংবাদিক দমন পীড়ন বন্ধ ও বন্ধ করে দেয়া ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সমূহ খুলে দেয়া সহ জনসংশ্লিষ্ট ১০ দফা দাবীতে শনিবার বেলা ২টায় সিলেট মহানগর জামায়াতের শান্তিপূর্ণ জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে এসএমপির পক্ষ থেকে জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি বলে আমাদেরকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়। কিন্তু কোন কারণে আমাদের জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি সেই বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নহে। জাতির চরম ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সিলেটবাসী বিস্মিত, হতবাক এবং জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এর মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণ হলো দেশে নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন বলে কিছু নেই। সিলেটে আমাদের জনসভার অনুমতি না দেয়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমাদের বক্তব্য জাতির সামনে তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে উপস্থিত হওয়ায় আপনাদেরকে আন্তরিক মুবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।