স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, দেশ জাতি আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। মাহে রমজানেও দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মানুষের উপর গ্রেফতার জুলুম নিপীড়ন চলছে। আমাদের সিলেটের কৃতি সন্তান আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কারাগারে রয়েছেন। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ¦ালানী তেল ও নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। দেশে আইনের শাসন নেই, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতাও নেই। জামায়াত সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শ্রেণী বৈষম্য দূর করে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ গড়ার মাধ্যমে সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গঠনই জামায়াতের প্রধান লক্ষ্য। জামায়াত আর্তমানবতার কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। কিন্তু আমাদের ভালো কাজ ক্ষমতাসীনরা সহ্য করতে পারেনা। তাই জুলুম নিপীড়নের স্টীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে কোন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আর্তমানবতার কল্যাণে জামায়াতের পথচলা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, মাহে রমজান হচ্ছে মানবতার মুক্তি সনদ মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে নিজেদেরকে পরিপূর্ণ মুত্তাকী হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। এই মাসে কুরআন হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনার পাশাপাশি ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করতে হবে। কুরআনের বিজয়ের মাস মাহে রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ঐক্য অটুট রেখে এদেশে ইসলামী জাগরণ তৈরীর সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষে জামায়াতের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার সাধ্য কারো নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকল জুলুম নিপীড়ন রুখে দাড়াতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
তিনি শনিবার সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে সাংবাদিক, পেশাজীবি, বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ও রাজনীতিবিদদের সম্মানে অনুষ্ঠিত মাহে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে ইফতার মাহফিলটি একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়।
নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে বিশিষ্ট আইনজীবি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, সিলেটে কর্মরত ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসকের পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মাহফিলে দেশ-জাতির মঙ্গল ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি-সুস্থতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়খ ইসহাক আল মাদানী।
হাফিজ মাওলানা মোশাহিদ আহমদের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সুচিুত মাহফিলে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন হোসাইন শাহরিয়ার রাজী ও আলিফ নূর।
মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুর হক চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান, সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, সিলেট জেলা উত্তর জামায়াতের আমীর হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খান, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট মহানগর জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, এলডিপির সিলেট জেলা সভাপতি সায়েদুর রহমান চৌধুরী রুপা, ইসলামী ঐক্যজোটের সিলেট মহানগর সভাপতি মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি সিদ্দিক আহমদ।
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল সালাম আল মাদানী, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শাকুর, অধ্যাপক আব্দুল আহাদ, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সহ-সভাপতি দেওয়ান মাহমুদ রাজা চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক লিপন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাবেক সহ-সভাপতি আমির হোসেন, ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সোহেল আহমদ রিপন, ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার আব্দুল মুহিত জাবেদ, ভাদেশ^র ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান, সাংবাদিক এনামুল হক জুবের, আমজাদ হোসাইন, কবীর আহমদ সোহেল, দুলাল আহমদ, কাউসার চৌধুরী, কবির আহমদ, এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন শামীম, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুর রহমান, সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদ, সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম, সিলেট মহানগর জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক সরকার, সিলেট মহানগর সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব ও ড. নুরুল ইসলাম বাবুল প্রমূখ।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জামায়াত সহ দেশপ্রেমিক জনতাকে অতীতের ন্যায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এই সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে। জনতার সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে।
সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বিভাজন-বিভক্তির রাজনীতি পরিহার করতে হবে। জালিম সরকারের হাত থেকে জাতিকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন সকলে মিলে এই নগরী ও এই দেশকে নিজেদের মত করে সাজানোর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ফজলুর রহমান বলেন, দেশ ও জাতি চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের ন্যয় চেপে বসা স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের সকল স্তরে ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার শপথ নিতে হবে।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাহে রমজান হচ্ছে কুরআন নাযিলের বরকতময় মাস। এই মাসে আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কুরআনের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার শপথ নিতে হবে। তাহলে ইহকালিন সাফল্য ও পরকালিন মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন- পবিত্র মাহে রমজান হচ্ছে কুরআন নাজিলের মাস। এই পবিত্র মাসে ইসলামের প্রাথমিক এবং চুড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। তাই আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান থেকে শিক্ষা নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় শপথ নিতে হবে। সকল জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা সত্য ও ন্যায়ের পথে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।