-মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন
২৮ অক্টোবর ২০০৬ সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। সেদিন ঢাকার পল্টনে লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে যে বিভীষিকাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, যা আইয়্যামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগের লোকেরা জীবন্ত কন্যা সন্তানকে প্রথিত করতো। তারা ‘জোর যার মল্লুক তার’ ধরনের আচরণ করলেও প্রকাশ্যে দিবালোকে সাপ পিটিয়ে মারার মতো মানুষ হত্যার ঘটনার কথা জানা যায় না। এখানেই শেষ নয়, মৃত্যু নিশ্চিত জানার পরও মৃত ব্যক্তির লাশের ওপর উঠে নৃত্য করা এবং লগি-বৈঠা দিয়ে লাশকে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে লোমহর্ষক নির্যাতনের আরেকটি উদাহরণ আছে বলে মনে হয় না।
এরকম একটি লোমহর্ষক ঘটনার জন্ম কেন দেওয়া হলো? সেদিনের ঘটনার আসল রহস্যটা কি?
সে দিনটি ছিল চার দলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদি কার্যকালের শেষ দিন। ঐ দিনই জোট সরকারের প্রধান দু’টি দল যথাক্রমে বিএনপি নয়া পল্টনে এবং জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে ক্ষমতার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তি উপলক্ষ্যে সমাবেশ আহ্বান করেছিলো। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পাল্টা সমাবেশ আহ্বান করে লগি-বৈঠাধারী গোষ্ঠীটি। সমাবেশের দিন ভোর থেকে তারা মারমুখী আচরণ শুরু করে। বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা তাদের সমাবেশস্থলকে ঘিরে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছিলো। লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা কোন কারণ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানকারী জামায়াত-শিবিরের নিরীহ কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে অসংখ্য ভাইকে আহত করে। যাদের মধ্যে শহীদ জসিম উদ্দিন, শহীদ মোঃ হাবিবুর রহমান, শহীদ জসিম উদ্দিন (২), শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম, শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন ও শহীদ সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুম কেউ ঘটনা স্থলেই, কেউ হাসপাতালে নেয়ার পথেই, কেউ হাসপাতালে নেয়ার পর শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান। অসংখ্য ভাই এখনো আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে জিন্দা শহীদ হিসেবে বেঁচে রয়েছেন। আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে সুস্থতার পূর্ণ নিয়ামত দান করুন। আমীন।।
এই ঘটনা যখন ঘটলো তখনও কার্যত চার দলীয় জোট সরকারই ক্ষমতায় আসীন ছিল। কেননা পরের দিন সকাল ১০টায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে গিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই দেশব্যাপী এ ধরনের নারকীয় তাণ্ডব সৃষ্টির পিছনে নিঃসন্দেহে সদূরপ্রসারী নীল নকশাই কাজ করেছে। নীল নকশা প্রণয়নকারীরা ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলো, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে পরবর্তী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাদের ক্ষমতায় আসার কোন সম্ভাবনা নাই। তাই বাঁকা পথে পিছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার পথ পাকাপোক্ত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সেদিনের সেই পৈশাচিক ঘটনার অবতারণা করেছিলো।
কী ছিল তাদের পরিকল্পনায়?
১. তাদের আসল পরিকল্পনা ছিল শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করা।
২. দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও চেষ্টা-প্রচেষ্টার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর, ভাষা সৈনিক, ডাকসু’র সাবেক নির্বাচিত জিএস অধ্যাপক গোলাম আযমের দেয়া কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা অনুসরণে নির্বাচনের জন্য যে একটি ভালো পদ্ধতি ও প্র্যাক্টিস গড়ে উঠেছিলো সেটাকে ব্যহত করা।
৩. শিশু গণতন্ত্রের কবর রচনা করে একদলীয় বাকশালী শাসন ব্যবস্থার দিকে দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে দেশের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেওয়া।
৪. দেশ থেকে ইসলাম, ইসলামী মূল্যবোধ ও তাহজীব-তামাদ্দুনের বিদায় ঘটানো।
৫. দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও দেশপ্রেমিক ইসলামী নেতৃত্বকে খতম করে দেশকে পঙ্গু করা।
৬. বিরাজনীতি করণের মাধ্যমে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্ত পরায়ণতার প্রসার ঘটানো।
৭. দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ঋণের জালে আবদ্ধ করে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের পথকে প্রসারিত করা।
৮. দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলা এবং দেশকে কার্যত একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করা।
উপরোক্ত সবগুলো পয়েন্ট পর্যালোচনা করে আজকের বাংলাদেশের সাথে যদি মিলানো হয় তবে তার প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করা যাবে।
আজকের বাংলাদেশের সংকট?
মানবাধিকার
জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? গত এক দশকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ২,৫৩৭ জন, গুম ৫৮৭ জন, কারাগারে মৃত্যু ৭৮০ জন। ২০২০ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ১৮৮ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযানে ১১২ জন নিহত হয়েছেন। গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় নিহত হয়েছে ১১ জন। ২০২০ সালে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে ৫৮৯ শিশু নিহত হয়েছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৮৮। কেউ নিখোঁজের পর পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে উক্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করা যায়, উল্টো তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৭ সালে ৪৫ জনের ক্ষেত্রে গুম থাকার পর গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোরপূর্বক বিদেশ পাঠানো হয়েছে। মেজর সিনহাকে কক্সবাজার পুলিশ চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি কারাগারে মারা গিয়েছেন লেখক মুশতাক আহমেদ। ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার মতো মামুলি বিষয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান-আল আযমী, ব্যারিষ্টার আরমান প্রমুখ এখনো গুম।
গুম হয়েছিলেন কলামিস্ট কবি ফরহাদ মজহার, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাঈদী সাহেবের মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি প্রমুখ।
২০১৭-২০১৯ এই তিন বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ১৫৪ জন ব্যক্তি। উল্লেখ্য যে, বুয়েটে হলের মধ্যেই পিটিয়ে হত্যা করা হয় মেধাবী ছাত্র আবরারকে। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডব বিভিন্ন সময় দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। ২০১০ সালে নাটোরের বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবুকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়। ২০২০ সালে ৭৪টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। (দৈনিক সংগ্রাম, ০২ জানুয়ারি ২০২১)
সার্বিকভাবে ক্রসফায়ার, গুম, অপহরণ, বন্দুকযুদ্ধ একটি অস্থির বাংলাদেশের পরিচয় বহন করছে। এগুলো গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতি প্রমাণ করে। বিরোধী দল ও মতকে নৃশংস কায়দায় দমনের পাঁয়তারা চলছে। এসবের পিছনে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের ফ্যাসিবাদী চিন্তা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভঙ্গুরতা ও প্রাতিষ্ঠানিক গণতান্ত্রিক চর্চা উঠে যাওয়ার পর এখন মানুষের মন মগজ থেকেও গণতান্ত্রিক মনোভাব উঠে যাচ্ছে।
দেশে ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭২৯ জন শ্রমিক নিহত এবং ৪৩৩ জন আহত হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৯৬ জন শ্রমিক। জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। (এনটিভি অনলাইন ০৯ জানুয়ারি ২০২১) যা খুবই উদ্বেগজনক।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। সর্বশেষ বাজেটে ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে প্রচুর ঋণ নিচ্ছে সরকার। বিদেশি দাতা, দেশীয় ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিচ্ছে। ৬৪ হাজার কোটি টাকা এ বছর সুদ পরিশোধ করবে সরকার। ঋণের আসল তো পড়েই রইলো।
খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। (প্রথম আলো, ২২ জানুয়ারি ২০২০)। দেউলিয়া হতে বসা ব্যাংক বাঁচাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে ট্যাক্সের টাকায় ভর্তুকী দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে ব্যাংকগুলো এখনো ২৯ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে আছে। (ইত্তেফাক, ০৪ মার্চ ২০২১)
নিত্যপণ্য বিশেষ করে পিঁয়াজ ও চালের দাম প্রায়শ বেড়ে যায়। সয়াবিন তেলের লিটার এখন ১৫৫ টাকা। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেল ও সারের দাম বাড়তেই আছে। ১০ বছরে ৮ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ধান, পাট ও চামড়ার দাম পায় না জনগণ। আয় বৈষম্য বেড়েছে প্রচুর। ২০১৯ সালের তথ্য মতে, ব্যাংকে কোটি টাকা আছে এমন একাউন্টের সংখ্যা ৮৩ হাজারের বেশি। রপ্তানি আয় কমেছে। করোনার আগে থেকেই গার্মেন্টস বন্ধ হচ্ছে। প্রচুর শ্রমিক বেকার হচ্ছে। দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের তথ্য। ২৭% তরুণ পড়ালেখা, প্রশিক্ষণ বা কর্ম কোনো কিছুতেই নেই।
প্রতিবেশী ভুটান দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে পরিচিত। তাদের অবস্থান ২৪তম। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ১৪৬তম। বাংলাদেশ এখন লুটপাটের দেশে পরিণত হয়েছে। ব্যাংক থেকে হাজার-হাজার কোটি টাকা গায়েব হচ্ছে। মেগাপ্রকল্প থেকে লুটপাট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সরকারী ক্রয়ে অস্বাভাবিক দাম দেখানো হয়। বালিশ থেকে শুরু করে পর্দা! ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি (জেএফআই) এর তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। দুর্নীতি ক্রমশঃ সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। সরকারি কাজ এখন টাকা ছাড়া হয় না।
শিক্ষাঙ্গন
সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বুয়েটে আবরারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা ও ঢাকা মেডিকেলে আলী ইমাম শীতলকে পিটিয়ে মারাত্নক জখম করা হয়েছে। বিশ্বজিৎকে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনেই রাজপথে কুপিয়ে হত্যাসহ আরো অনেক ঘটনা রয়েছে।
রাজনৈতিক নির্যাতন
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বিপুল সংখ্যক মামলা, গ্রেফতার, রিমাণ্ড, ফাঁসি, সভা করতে না দেয়া, অফিস বন্ধ করা, প্রার্থী অপহরণ/গুম ইত্যাদি করা হচ্ছে। সরকারের উপুর্যুপুরি নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জামায়াত নেতাদের কথিত বিচারের নামে হত্যা এবং কাউকে কাউকে দীর্ঘ মেয়াদে কারারুদ্ধ করে রেখেছে।
ভোটাধিকার হরণ
২০০৮ সালের পর থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। ভোটের রাজনীতি নেই। সরকারি দলের নমিনেশন পেলেই বিনা ভোটে বিজয়ী হয়ে যাচ্ছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত তিন বছরে গ্রেফতার হয়েছে ১৯৯ জন। সাংবাদিক নির্যাতন (মাহমুদুর রহমান, আবুল আসাদ, রুহুল আমিন গাজী)। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই ব্যবস্থা। অনেক সাংবাদিক ইতিমধ্যে দেশ ছেড়েছেন।
মূল্যবোধের অবক্ষয়
অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। গত এক যুগে ৯৫৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
সার্বিক দিক বিবেচনায় আজকের বাংলাদেশের চিত্র সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। বহু বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, এমন বাংলাদেশ দেখার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এই বাংলাদেশের প্রকৃত রূপ তো এই ছিল যে, সকালে ক্যাম্পাসে, বিকেলে নগরে, শহরে, মাঠে পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া হয়েছে কিংবা ছোট-খাটো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তারপর সন্ধ্যায় সামাজিক অনুষ্ঠানে একসাথে একত্রিত হয়ে এক টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া হয়েছে, কুশল বিনিময় হয়েছে কিংবা কারো সন্তান জন্ম নিলে উপহার নিয়ে তার বাসায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়েছেন। কেউ মারা গেলে দলমতের পরিচয় না দেখে জানাযা ও দাফনে উপস্থিত হয়েছেন এবং মৃতের আত্নীয়-স্বজনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। এটাই ছিল আবহমান বাংলার চিরায়িত সংস্কৃতি। আজকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে উস্কে দিয়ে এমন এক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে যে, কেউ কারো মুখ দেখাদেখি, হাত মিলানো, কুশলাদি বিনিময়, সন্তান জন্ম নিলে শুভেচ্ছা জানানো, সামাজিক অনুষ্ঠানে একত্রিত হওয়া এমনকি জানাযায় পর্যন্ত যেতেও অনিহা তৈরি হয়েছে। যা সত্যিই বেদনাদায়ক।
আমরা এই বাংলাদেশ চাইনি। আমরা আমাদের সেই চির পরিচিত কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে থাকবে না হিংসা, মারামারি, কাটাকাটি, গুম, খুন, অপহরণ ও ভিন্ন মতকে জোর করে বন্ধ করে দেয়ার মতো গর্হিত কাজ। আর তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। প্রয়োজন জনগণের ইস্পাত প্রাচীর ঐক্যের। তাই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বাঁধামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে দলমত, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ব্যক্তি ও দলীয় ক্ষুদ্র স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে মুক্ত মনে জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। আর এভাবেই জাতীয় মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
লেখক: কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।