অধ্যাপক মফিজুর রহমান
عَن اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِىْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَتَزُوْلُ قَدْ مَااِبْنِ ادَمَ حَتّى يَسْئَلُ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِ فِيْمَا اَفْنَاهُ ০ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيْمَا اَبَدَاهُ ০ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ ايْنَ اَلْتَسَبَه ০ وَفِيْمَا اَنْفَقَه ০ وَمَاعَمِلَ فِيْمَا عَلِمَ ط (وَتِرْمِزِىْ)
অনুবাদ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) নবীয়ে কারীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী (সা) বলেন পাঁচটি বিষয়ে জবাব না দেয়া পর্যন্ত কোন মানব সন্তানের পা উঠাতে দেয়া হবে না। ক. জীবন কীভাবে শেষ করেছ? খ. যৌবন কিভাবে বিদায় করে যৌবন কিভাবে বিদায় করেছ? গ. ধনসম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছ? ঘ. কোন পথে উহা ব্যয় করেছ? এবং ঙ. অর্জিত জ্ঞানের কতটুকু আমল করেছ?
ইলমুল হাদিস : সে জ্ঞান আমাদেরকে রাসূল (সা) এর কথা কাজ ও সমর্থন বিষয়ে জানিয়ে দেয় উহাই হাদীসের জ্ঞান। (মুহাদ্দেসে দেহলভী হযরত আব্দুল হক) আমরা আলোচনা করছি যে, হাদীসে রাসূলের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আছে একটি সনদ। উহা হাদীসের সে অংশ যাতে হাদিস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত রয়েছে। হাদিস বর্ণনাকারীদের ক্ষেত্রে সনদ এর জ্ঞান অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মুহাদ্দীসগণের ভাষায়-
اَلسَّنَلُ هُوَ الطَّرِيْقُ الْحَدِيْثِ وَهُوَ رِجَالُه الَّذِيْنَ – (رَوَاهُ)
একে বলা যেতে পারে মূল হাদিসের পৌঁছার পথ।
দ্বিতীয়টি মতনঃ ইহা হাদীসের রাসূল এর মূল শব্দসমূহ মুহাদ্দীসগণ ইহাকে বলেছেন, নবীজীর (সা) এর বাণী- وَهُوَ اَلْفَاظَ الْحَدِيْثُ
হাদীসে রাসূল (সা) আলোচনায় হাদীসের সনদ ও মতন উভয় বিষয়ের জ্ঞান একান্ত জরুরী। পৃথিবীর কোন নবী রাসূল বা কোন মহামানবের মুখনিঃসৃত বাণী যাচাই করার এত কঠিন মানন্ড উৎরে যাওযার বিষয়টি কেউ কোন দিন ভাবেনি। মুহাম্মদ (সা) মানব ইতিহাসের একমাত্র মহাব্যক্তি যারঁ প্রতিটি বুলি প্রতিটি আচরণ সত্যের কঠিন কষ্টিপাথরে যাচাই হয়ে আসছে। হিজরীর দ্বিতীয় শতাব্দি হতে চতুর্থ শতাব্দি পর্যন্ত এই সময়টি মুস্তফা (সা) এর হাদিস সংকলনের স্বর্ণযোগ।
নবীয়ে কারিম (সা) থেকে যিনি হাদীন বর্ণনা করেছেন সে থেকে হাদিস সংকলিত হওয়া পর্যন্ত যতজন বর্ণনাকারী এ হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি রাবীর জীবনকে সততা, তাকওয়া ও আমানতদারীতা এবং স্মৃতি শক্তির প্রখরতার বিষয়ে মুযদ্দীসতান পরীা ও যাচাইয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ের পৌছাঁর কঠোর এবং কঠোরতম সাধনা করেছেন।
হাদিস সংকলনের ও যাচাই বাছাইয়ের এ কঠিন ও দুরূহ কাজে যাঁরা হায়াত ব্যয় করেছেন তিলতিল করে, তাদের মধ্যে অন্যতম ইমাম আহমদ, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম বুখারী, ইমাম আবু ঈসা তিরমিযি, ইমাম আবু দাউদ ও নাসাঈ প্রমুখ। সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদী তাদের কাছে ঋণী হয়ে আছেন। যা কোন দিন শোধ হবার নয়। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল ২টি স্তম্ভের উপর আল কুরআনের পর রয়েছে আল হাদিস এর একটি অপরটির পরিপূরক।
যারা কুরআনকে পরিপূর্ণ মনে করেন হাদীসের প্রয়োজনীয়তা অবিশ্বাস করেন তারা চতুরতার সাথে ইসলামের মূল শিড়র কেটে দিতে চায়। আমার বুঝতে কষ্ট হয় এ সমস্ত তথাকথিত পন্ডিতেরা কি বুঝেনা এ কুরআনটিকে আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা) উপরেই নাযিল করেছেন। এ কিতাবের গুরুত্ব তাকেই জানিয়ে দিয়েছেন। আর মানুষদের বলে দিয়েছেন, ‘‘মুহাম্মদ (সা) যা বলেন উহাই গ্রহণ কর আর তিনি যা নিষেধ করেন উহা থেকে বিরত থাক”।
“কুরআনের আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুহাম্মদ (সা) নিজের থেকে কিছুই বলে না আর যা বলেন উহা তার উপর নাজিলকৃত ওহা।”
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوى اِنْ هُوَ اِلاَّ وَحْىٌ يُّوْحىْ – সূরা নজম-৩-৪।
সাহিবুল হাদিস: যিনি প্রথম রাসূল (সা) হতে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)। বাল্যকালে মক্কার লোকেরা তাকে ইবনে উম্মে আবদ বলে ডাকত। সে মক্কা থেকে দূরে পাহাড়ী রাস্তায় জনৈক কুরাইশ সর্দার উকরা বিন মু. আইদের বকরী চরাতেন। নবীজির আগমন সংবাদ শুনলে একেত কম বয়স আবার সকালে বকরির পাল নিয়ে যাওয়া ও রাতে ঘরে ফিরে আসা ছিল নিত্যদিনের কাজ। এক দিন বকরির পাল নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে এমন সময় দেখলেন দুইজন সুপুরুষ কান্ত ও পরিশ্রান্ত আস্থার তাকে বলল, হে বালক, আমাদেরকে একটি বকরি দোহন করে দুগ্ধ এনে দাও আমরা পিপাসা নিবারণ করি”। বালক আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ উত্তর দিলেন, “আমি বকরীর মালিক নই, আমি এর রক ও আমানতদার মাত্র” তাদের একজন বলল, বেশ তুমি ভালই বলছ, তবে আমাকে এমন একটি মাদী বাচ্চা বকরি দেখিয়ে দাও যা এখনও বাচ্চা দেয়নি। বালক আব্দুল্লাহ পাশের একটি বকরির বাচ্চার দিকে ইশারা করল। মুহাম্মদ (সা) বিসমিল্লাহ বরে তা পালানে হাত বুলাতে আরম্ভ করল দেখতে দেখতে দুধ আসতে লাগল, অপর ব্যক্তি একটি বাটি ধরলেন যা দুধের পূর্ণ হয়ে গেল। তারা দুগ্ধ পান করে আব্দুল্লাহকেও পান করালো। আব্দুল্লাহ জিজ্ঞাসা করল, আপনার পরিচয় কি? বলা হলো এই বকর পূর্ণ ব্যক্তিটি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর। সাথীটি আবু বকর (সা)। এর কয়েক দিন পর এ বালক ইসলাম কবুল করে রাসূলের খিদমাতে নিজকে পেশ করে দিলেন। রাসূলের বাড়িতে অবস্থান করতেন। রাসূলের অজু গোসলের ব্যবস্থা করা. ঘর হতে বের হওয়ার সময় জুতা পরিয়ে দেয়া, ঘরে প্রবেশ করলে জুতা খোলা, লাঠি ও মিসওয়াক এগিয়ে দেয়া এসব কাজ এবালকের তত্বাবধানে হতো। রাসূল (সা) নিবিড় সাহাচার্য্য কারণে নবীজি (সা) এর আখলাকে তিনি গুনান্বিত ছিলেন।
তিনি আল কুরআনের বিষেশজ্ঞ সাহাবী ছিলেন। রাসুল (সা) বলেন, “যে মধুর সূরে কুরআন অবতীর্ণ, কেই যদি সেই সূরে কুরআন তিলাওয়াত করতে চায় সে যেনো আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের সূরে কোরআন তিলাওয়াত করে”।
ইবনে মাসউদ বলতেন, সে আল্লাহর কসম যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। কুরআন মাজিদের এমন কোন আয়াত নাযিল হয়নি। যে আয়াত সম্পর্কে আমি জানি না তা কোথায় নাযিল হয়েছে আর কি বিষয়ে নাযিল হয়েছে।
তিনি প্রথমে আবিসিনিয়ায় ও পরে মদীনা শরিফে হিযরত করেন। তিনি রাসূল (সা) সাথে বহু যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন কুফায় কাজীর পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তিনি ৮৪৮টি হাদিস বর্ণনা করেন। বুখারীতে ২১৫টি হাদিস সংকলিত হয়েছে। হযরত উসমান (রা) খিলাফতের সময় তিনি মৃত্যুর শয্যায় শায়িত হলে খলিফা তাকে দেখতে যান। খলিফা জিজ্ঞাসা করেন, আপনাকে অস্থির মনে হচ্ছে কেন? ইবনে মাসউদ বলেন, “আমি গুনাহর জন্যে আল্লাহ তায়ালা কে ভয় করছি”। খলিফা আবার বলেন, “আপনি কিসের আকাংখা করছেন? তিনি বলেন, “আমি শুধু আল্লাহর রহমতের আকাংখা করছি”। খলিফা আবার জিজ্ঞাসা করেন, “বায়তুলমাল হতে নাগরিক ভাতা নিচ্ছেন না অনেক দিন, তা কি আপনার মেয়েদের জন্য চালু করব?” না আমি আমার মেয়েদের অভাবগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করি না। আমি তাদেরকে প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছি আমি আমার প্রিয় রাসূলকে বলতে শুনেছি-
وَأِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: مَنْ قَرَألْوَاقِعَةَ كُلُّ لَيْلَةٍ لَمْ تُصِبْهُ فَاقَةً اَبَدًا ط
“যে প্রতি রাত সূরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করবে অভাব তাকে স্পর্শ করবে না”।
ঐ রাতে কুরআন আল কারিম তিলাওয়াত করা অবস্থায় ৩৩ হিজরি ৯ রমযান ৬০বছর বয়সে ইবনে মাসউদ ইন্তেকাল করেন। হযরত উসমান (রা) তার জানাযার ইমামত করেন এবং তাকে বাকির কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হাদীসের উৎস: হাদিসটি মরফু যেহেতু বর্ণনা কারী নিজে মুহাম্মদ (সা) থেকে উহা বর্ণনা করেন। ইহার সনদ মুত্তসিল মধ্যখানে কোনো রাবি বাদ যায়নি। ইমাম আবু ঈসা তিরমিজি তার জামে ‘তিরমিজি’তে সহিহ্ হিসেবে হাদিসটি চয়ন করেছেন। ইমাম তিরমিজির এই হাদীসের কিতাবখানাতে ৪,৪১৫টি হাদিস সংকলন করেন। তিনি বলেন, আমি সহীহ সনদ যুক্ত এ হাদিসের গ্রন্থটি সম্পূর্ণ করে হেফাজতে মুহাদ্দীসের নিকট পেশ করি তারা সকলে ইহা পছন্দ করেন ও সন্তেুাষ প্রকাশ করেন। অতঃপর আমি কিতাবটি খোরাসানের মুহাদ্দিসের নিকট পেশ করি তাঁরাও সন্তেুাষ প্রকাশ করেন”।
তিনি বলেন, “যার ঘরে আমার কিতার খানা থাকবে সে যেন মনে করে তার ঘরে আল্লাহর রাসূল (সা) অবস্থান করে কথা বলছেন।” (আল বেদায়া ওখান্নেহায়া)
অনেক মুহাদ্দীস মনে করেন বুখারী ও মুসলীম অপো তিরমিজি শরীফ বেশী ব্যবহারযোগ্য। বুখারী ও মুসলিম থেকে হাদিস শাস্ত্রে পারদর্শী লোকেরা ফায়দা হাসিল করতে সম আর তিরমিজি শরীফ হতে সকলেই হাদিস গ্রহণ করতে পারে। এটি হাদিস সংকলনের জগতে এক অনন্য নজির।
হাদিসের তাফসীরঃ
عَنِ النَّبِىْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ تَزُوْلُ قَد مَا اِبْنِ ادمَ حَتَّى يُسْئَلَ عَنْ خَمْسٍ ০
পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দেয়া পর্যন্ত কোন বনি আদম নড়তে পারবে না। কিয়ামাহ একটি ভয়াল দিনের নাম ইহা কখন কিভাবে শুরু হবে আল্লাহ ছাড়া কারে জানা নেই। কুরআন বলছে-
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ০ فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا ০ إِلَى رَبِّكَ مُنْتَهَاهَا
“উহারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামাহ সম্পর্কে, উহা কখন ঘটবে? এর সাথে তোমার সম্পর্ক কি? এ বিষয়ের চূড়ান্ত জ্ঞান তোমার রবের নিকট রয়েছে।” (সূরা নাযিয়াহ : ৪২-৪৪)
إِنِّي آمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُونِ ০ قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ
“অবিশ্বাসীরা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও বতে বল, কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি করে বাস্তবায়িত হবে? বলে দাও ইহার জ্ঞান শুধু আল্লাহতায়ালার নিকট রয়েছে। আমি শুধু সতর্ককারী মাত্র”। (সূরা ইয়াসিন : ২৫-২৬)
এই দিনটি অবশ্যই আসবে সেদিন সকল সৃষ্টিকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। সম্পদ প্রাচুর্য কিছুই কোনো কাজে আসবে না। সকলের হিসাব গ্রহণ করা হবে। কারো উপর জুলুম হবে না। প্রত্যেকের আমল পরিমাপ হবে। কুরআন বলছে,
اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ
“মানুষের হিসাবের দিনটি এক একদিন করে এগিয়ে আসছে কিন্তু মানুষেরা উদাসিনতায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।” (সূরা আম্বিয়া: ১১)
يَوْمَ لا يَنْفَعُ مَالٌ وَلا بَنُونَ ০ إِلا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ
“যেদিন ধনসম্পদ সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না। বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আসবে তারাই মুক্তি পাবে।”
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
“আজ আমরা ইহাদের মুখে মোহর করে দেব আজ তাদের হাত কথা বলবে তাদের পা সমূহ তাদের কৃত কর্মের স্যা দেবে।” (সূরা ইয়াসিন : ৬৫)
هَذَا يَوْمُ الْفَصْلِ جَمَعْنَاكُمْ وَالأوَّلِينَ ০ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ كَيْدٌ فَكِيدُونِ
“তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের আজ একত্র করেছি। যেহেতু আজই ফায়সালা হবে। তোমাদের কোনো মতা থাকলে আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তবে তোমরা তা প্রয়োগ কর।” (সূরা মুরসালাত: ৩৮-৩৯)
কিয়ামতের দিনের বিভীষিকার উপর প্রয়োজন স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করার এখানে সে প্রসঙ্গে নেই বিধায় কয়েকটি বাক্য দিয়ে সমাপ্ত করলাম। যে পাচঁটি বিষয় কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে সকলকে, উহাই এমন আলোচনা হবে।
ক. প্রথম প্রশ্ন: হায়াত কিভাবে শেষ হয়েছে।
عَنْ عُمْرِه فِيْمَا اَفْنَاهُ
হায়াত মূলত কতগুলো মুহূর্তের সমষ্টি। বিন্দু বিন্দু জল কনা যেমন সাগর সৃষ্টি করে তেমনি এক এক মুহূর্ত সময়ের কনিকা আশি বছরের জীবন তৈরি করে। এ জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর একক নিয়ন্ত্রণে। তিনি জীবন ও মৃত্যুর একক স্রষ্টা তার মাধ্যমে মানুষকে পরীা করেন কে সৎ কাজ করে আরকে অসৎ পথে জীবন ব্যয় করে। পরীার জন্যে যে জীবন নির্দিষ্ট তাকে যেনতেনভাবে ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। কুরআন বলছে-
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
“তিনি আল্লাহ, যিনি হায়াত ও মৃত্যুকে তোমাদের পরীার জন্যে সৃষ্টি করেছেন কে তোমাদের মধ্যে আমলের দৃষ্টিতে উত্তম আরকে অধম। তিনি মহাাপরাক্রমশালী ও মাশীল।” (সূরা মুলক : ২)
আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত ও সীমাহীন যদিও আমাদের জীবনের কাল সীমিত ও সংপ্তি। এক মুহূর্ত জীবন অলসতার বা অবহেলা এবং অপরিকল্পিত ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু উহার জন্য হায়াতের কোনো বরাদ্দ নেই। আবার উদ্দেশ্যহীন ল্যহীন জীবনকে ব্যয় করার কোনো অনুমতি ও আল্লাহতায়ালা দেননি। আল্লাহতায়ালা মুমিনদের হায়াত ও হায়াতের সবকিছু জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। সূরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে কেউ জান্নাত পেতে চায় তাঁকে আল্লাহ দ্বীন বিজয়ের লড়াইয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হবে। আমাদের জীবনের মূল দায়িত্ব সম্পর্কে কুরআনুল কারিম ও হাদিসের রাসুলে অনেক বিস্তারিত ভাবে আলোচিত হয়েছে। এককথায় দ্বীনের জিহাদ করা আমাদের জীবনের মূল কাজ উহার জন্যে আমাদেরকে বাছাই করা হয়েছে। কুরআন বলছে-
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
“তোমরা যিহাদ কর আল্লাহর রাহে জিহাদের দাবি পুরো করে। তিনি তোমাদেরকে দ্বীনের জন্যে মনোনিত করেছেন। সে দ্বীনের মধ্যে কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি। (সূরা হজ : ৭৮)
এ জীবনোদ্দেশ্যের বাইরে নাফারমানির পথে হায়াত ব্যয় করলে কিয়ামতে কঠিন প্রশ্নের সামনে দাড়াতে হবে। সেদিন আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করতে নাপারার পরিণতি যে ভয়াবহ হবে তাবলার অপো রাখেনা। যে আল্লাহ তায়ালা থেকে ছোট বড় কোন কিছু গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। তাই মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে কুরআন বলছে-
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
‘‘সে সকল মুমিনেরা সফল হয়েছেন যারা অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ থেকে জীবনকে দুরে রেখেছেন।” (সূরা মু’মিনুন : ৩)
খ. দ্বিতীয় প্রশ্ন : যৌবনের শক্তি ও যোগ্যতা কোথায় ব্যয় করেছে? وَعَنْ شَبَابِهِ فِيْمَ اَبَده
কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে দুইটি জীবন সংক্রান্ত। একটি সম্পূর্ণ হায়াতের বিষয়ে অপরটি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যৌবন সম্মন্ধে বলা যায়, যৌবন হচ্ছে জীবনের বসন্ত কাল। এ সময়টি জীবনের সবচেয়ে বেশি দামী। মানুষ বার্ধক্যে অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও শারিরিক অযোগ্যতার কারণে তা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই জীবনের বর্ণঢ্য বিকাশ ও প্রকাশে যৌবন কালের কোন বিকল্প নেই। প্রকৃতিতে বসন্ত বার বার আসে। কিন্তু জীবনের বসন্ত যৌবন একবার চলে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি ও আসবেনা। যে কেউ এ যৌবনের শক্তি ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এবং মানবতার কল্যাণে অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। আবার এই শক্তিকে জুলুম অত্যাচার, অনাচার সৃষ্টিতে লাগাতে পারে। অনেকে ধারণা করে জীবন ও যৌবনের অনাচার কদাচার করলেও বুড়ো বয়সে নেক কাজে আত্ম নিয়োগ করবে। আফসোস তারা জানে না যে এই রকম আশা পোষণকারি অনেকে সেদিন আমার আগে আল্লাহর সাথে দেখা হয়ে গেছে। কারণ আগামী কাল বেচে থাকার কোন গ্যারান্টি কারো নেই। আবার যৌবন কাল বিষয়ে যেহেতু প্রশ্ন হবে তাই উহা চলে যাওয়ার পূর্বে সবাইকে সর্তক হয়ে যেথে হবে। রাসূল (সা) তাই বলেছেন,
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعْظِهُ : اِغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ وَصِخْتَكَ قَبَلَ سُقْمِك وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَقِراغَكَ قَبْلَ شُغُلِكَ وَحَيَاتَكَ قَبْل مَوْتِكَ – (تِرْمِزِىْ)
“তোমরা পাঁচটি বিষয়কে অপর পাঁচটি বিয়ষের পূর্বে গুরুত্ব প্রদান করো
ক. যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে গুরুত্ব দাও।
খ. সুস্থতাকে রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে গুরুত্ব দাও।
গ. সচ্ছলতাকে দরিদ্র হওয়ার আগে গুরুত্ব দাও।
ঘ. অবসরকে ব্যস্ত হওয়ার আগে গুরুত্ব দাও।
ঙ. হায়াতকে মৃত্যু আসার আগে গুরুত্ব দাও। (তিরমিজি শরীফ)
গ. তৃতীয় প্রশ্ন :
وَعَنْ مَالِه مِنْ اَيْنَ اَلْتَسَبَه وَفِيْمَا اَنْفَقَه ০
মালসম্পদ কোথায় হতে উপার্জন করেছ?
ঘ. চতুর্থ প্রশ্ন : এবং কোথায় ও কিভাবে উহা ব্যয় করেছে?
জীবনের উপর দুইটি প্রশ্ন পরে। দুইটি প্রশ্ন মালসম্পদ উপার্জন কিভাবে আর কোন পথে ব্যয় হয়েছে। দুনিয়ার মোহ যেন মানুষের স্বভাব জাত। কুরআন বলেছেন, “অব্যশই মানব হৃদয়ে সম্পদের মোহ অতি প্রবল।” (সূরা আদিয়াত : ৮)
وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيدٌ ০
পৃথিবীতে যত বিপর্যয় সংগঠিত হচ্ছে তার অধিকাংশ সম্পদের কারণে হচ্ছে। কি ব্যক্তি জীবনে বা জাতীয় জীবনে সর্বস্থরে চলছে সম্পদ ও প্রাচুয্য প্রতিযোগিতা। সম্পদ মানুষের জীবন যাপনের অপরিহার্য এক বিষয়। উহা ছাড়া জীবনের একটি দিন অতিবাহিত করা যাবে। কিন্তু উহারতো একটি সীমা আছে। আলল্লাহ তায়ালার মানুষের জীবনের এ অপরিহার্য জিনিষ ধনসম্পদ উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধি হালাল হারামের সীমা বর্ণনা করে দিয়েছেন। যেমন ব্যবসাকে হালাল করেছেন আবার সুদকে হারাম করেছেন। রাসুল (সা) কে সর্বোৎকৃষ্ট আয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যাহা হাত দিযে অর্থাৎ পরিশ্রম করে অর্জন করা হয় আর উত্তম ব্যবস্া আবার উত্তম খরচ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে নবী করীম (সা) বলেন, ১) পরিবার পরিজন প্রতিপালনের জন্য যে মাল ব্যয় হয়েছে। ২) যা দিয়ে যিহাদের হাতিয়ার ক্রয় করা হয়েছে। ৩) যে মাল মুজাহিদদের জন্য ব্যয় হয়েছে।
আজ সমাজের দিকে থাকালে দেখা যায়, অনেকের উপার্জন হারাম উপায়ে আবার ব্যয়ও করেছে অবৈধ পন্থায়, আবার কারো আয় হালাল পন্থায় কিন্তু ব্যয় করেছে হারাম পন্থায়, আবার এমন ও বিকল্প দৃষ্টান্ত আছে। যাদের আয় রোজগার হারাম পন্থায় ব্যয় করে সৎ পথে আর খুব কমই এমন দৃষ্টান্ত যাদের সম্পূর্ণ আয় রোজগার বৈধ পন্থায় আর ব্যয়ও করে শরিয়তের মানদন্ডে একটি শ্রেণী ব্যতীত কারো রেহাই হবে না কিয়ামতের কঠিন দিনে। তাদেরও নয় যাদের আয়-উপর্জন করেও যারা ব্যয়ের েেত্র বৈধ পন্থায় অপচয় করে বা প্রয়োজনীয় খরচ করে না। তারাও জবাবদিহি হতে রেহাই পাবে না।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ব্যয় সম্পর্কে কুরআন বলেছে-
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا- (সূরা ফোরকান : ৬৭)
“যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না। কার্পণ্যও করে না। বরং তারা মধ্যম পন্থায় করে।”
“যে জ্ঞান সে অর্জন করেছে তার কতটুকু আমল।
وَمَا عَمِلَ فِيْهَا عَامِلْ
পৃথিবীতে মানব জাতীর শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ- জ্ঞান। আল্লাহ তায়ালা আদমকে জ্ঞান দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। وَعَلَّمَ آدَمَ الأسْمَاءَ كُلَّهَا – (সূরা বাকারা : ৩১)
“তিনি আদমকে সকল কিছুর নাম শিখিয়ে দেন।” আর আল্লাহ তায়ালা সকল জ্ঞানের মূল উৎস। যারা জানে আর যারা জানে না তার সমান হতে পারে না। কুরআনে এই আয়াতে প্রতিধানযোগ্য।
هَلْ يَسْتَوِى الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لاَيَعْلَمُوْنَ
তবে জ্ঞান নিজেই কোন উদ্দেশ্যে নহে। আমলের জন্য ইলম জরুরী। নবীয়ে কারীম (সা) বলেছেন, “যে আলেমের নিকট আমল নেই সে তো ঐ গাছের মত যার ফল নেই।” যে জ্ঞানী তার অর্জিত জ্ঞানের উপর আমর করে না সে জ্ঞানকে অসাম্মাসিত করে। একটি সময় আসবে যেদিন আমল বিহীন এ জ্ঞানই তার অসম্মানের কারণ হবে।
عَنْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةُ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَوَضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ غَيْرِ اَهلِه كَمُقَلِّدِ الْخَنَازِيْرِ الْجَوْهَرَ وَالُّؤْلُؤَ وَالذَّهَبَ – (اِبنِ مَاجه)
“হযরত আনাস হতে বর্ণিত, নবী কারিম (সা) বলেছেন, “ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ। আর অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে যে ইলম দান করে সে যেন শুকরের গলায় কর্ণ, হিরা মনিমুক্তার মালা ঝুলায়।” (ইবনে মাজাহ)
এখানে ইলম বলতে অহির জ্ঞান কে বুঝানো হয়েছে। অনুপযুক্ত ব্যক্তি হলো যে জ্ঞানকে কাজে লাগায় না। ইলমের বিপরীত আমল করে তার জ্ঞান হলো বানরের গলায় মুক্তার হার কাটিয়া করে চুরমার। সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে আজ যে অবয় মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে এর মুল কেউ যদি বলে অজ্ঞতা মনে হয় সঠিক জবাব হবে না। কে জানেনা মিথ্যা বলা মহাপাপ। সকল ধর্মের সকল পন্ডিতেরা সাবধান করার পরও বুকে হাত রেখে বলা যাবে না। আমরা জীবনের সকল বিষয়ে ওসব সময়ে সত্য গ্রহণ করছি। প্রায় প্রতিটি পরিবারের আজ অশান্তির তুষের আগুন, কিন্তু কেন? সকল ধর্মে এ কথাটি স্বীকৃত স্বামীর উপর স্ত্রীর যেমন অধিকার রয়েছে স্ত্রীর উপরও স্বামীর অধিকার রয়েছে। তবে আল্লাহ তায়ালা নারীর উপর পুরুষকে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দিয়েছেন। রাসুলে (সা) এতটুকু পর্যন্ত হাদীসে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যদি সিজদাকে মানুষের জন্যে বৈধ করতেন তবে আমি নারীদেরকে তাদের স্বামীকে সিজদার হুকুম দিতাম। এ মর্যাদাবোধ না থাকায় আজ গোটা সমাজ ব্যবস্থা ভাংগনের করাল গ্রাসে। যা হাদীসের উক্তি তাহলো জানাটা হবে মানারজন্যে। নিছক জানাটাই মুক্তি নয় বরং মানাট্ইা মুক্তি। কিয়ামতেও প্রশ্ন হবে জানার কতটুকৃ মানা হয়েছে বা আমল করা হয়েছে। আমলকে মিজানের পাল্লায় তোলা হবে উহার উপর জান্নাত-জান্নামের ফায়সালা হবে।
হাদিসের শিক্ষা:
১ “কিয়ামাত” একটি কঠিন ও ভয়াবহ দিন, সমগ্র সৃষ্টি যে দিন আল্লাহতায়ালার নিকট হাজির হবে। ন্যায় ও অন্যায়ের বিষয়ে তুলা দন্ডে বিচার হবে আর জান্নাতী ও জাহান্নামী কারা তার ঘোষণা হবে।
২. যে প্রশ্ন হাশরের মাঠে হবে উহার প্রস্তুতি দুনিয়ার জীবন থেকে মৃত্যুর আগেই শেষ করতে হবে। নতুবা শুধু আফসুস করে হাতের আঙ্গুল কামড়িয়ে খেয়ে ফেলবে কিন্তু কোন ফল হবে না।
৩. জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান ও আল্লাহর দান। একে অপচয় করা যাবে না। আর জীবনকে ল্েযর পথে ব্যয় করতে হবে।
৪. যৌবনকে হায়াতের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। যাবতীয় সীমা লঙ্ঘন ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘যে ব্যক্তি যৌবনকে আল্লাহর বন্দেগীতে বার্ধাক্যে পৌঁছে দিয়েছে সে কিয়ামতের কঠিন দিনে আল্লাহর আরশের নিচে অবস্থান কারীদের অন্তভুক্ত হবে।’
৫. জীবন পরিচালনায় হালাল রুজি অর্ণেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। হারামের রাজপথ ছেড়ে দিয়ে হালালের কণ্টকাকীর্ণ গলিপথে চলিতে হবে। এর জন্যে বিলাসিতার জীবন নয় বরং সাধাসিধা জীবন যাপনে অভ্যস্থ হতে হবে।
৬. কোন অবস্থায় হারামের পথে মালা সম্পদের এক কণা ব্যয় করা যাবে না। সব সম্পদের মূল মালিক আল্লাহতায়ালা। তার অসন্তোষের পথে চলার পরিণতি ভয়াবহ হবে একদিন।
৭. জ্ঞান শুধু অর্জন করাই সার্থকতা নয় বরং অর্জিত জ্ঞানকে আমলে রূপান্তর করাই সফলতা। সমস্ত কামিয়াবীর ফায়সালা হবে আমলের উপর।
উপসংহার:
প্রিয় পাঠক, কিয়ামতের প্রশ্নের আলোকে আসুন আমরা নিজেদেরকে পর্যালোচনা করি। এক একটি প্রশ্নের মধ্যে সমগ্র জীবন রয়েছে। আমার অহংকার, প্রাচুর্য, শক্তি, দাপট, বুদ্ধি, কৌশল কোন কিছুই আল্লাহর হাত থেকে আমার নাজাতের কোন উপায় হবে না। রাসূল (সা) নিজ কন্যা ফাতিমা (রা)-কে বলেন, “মা তুমি তোমার নেক আমল দিয়ে আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি লাভ কর। আল্লাহর মোকাবিলায় আমি তোমাকে কিছুই করতে পারব না। তিনিও জিজ্ঞাসা করবেন না তুমি কার মেয়ে।” (সহীহ বুখারী)
হে প্রভু, কিয়ামতের কঠিন সংকট উত্তরণে আমাদেরকে প্রস্তুত হওয়ার তাওফিক দিন। মরণের ডাক কখন আসবে জানি না, প্রস্তুতির আজও কিছুইত হলো না। হায়াতটি নিরবে যেন শেষ হয়ে গিয়েছে। গাফলতির মরণ ঘুম আজও ভালো না।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ