—মতিউর রহমান আকন্দ
“আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে আদালতে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। আদালতে সত্য উন্মোচিত হবে। আমি কোন অন্যায় করিনি, আমার ঘাবরানোরও কোন কারন নেই। তোমরা আইনী লড়াই চালিয়ে যাও। ফলাফল নিয়ে তোমরা চিন্তা করোনা।”—কথাগুলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের।
তার মামলা পরিচালনাকালে নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে মামলা বিষয়ে আলোচনার সময় তিনি এ কথাগুলো বলেছিলেন।
সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় তাকে হত্যা করা হবে তা মানতে তিনি রাজী ছিলেননা। বিচার চলাকালে ও কারাগারে আইনজীবী হিসেবে সাক্ষাৎকালে বিভিন্ন আলোচনাকালে তিনি আদালতের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন তা বিরল।
শহীদ মুজাহিদ আইনানুগত একজন নাগরিক ছিলেন। আইনবিরোধী কোন কাজ তিনি বরদাস্ত করতে পারতেননা। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন নাগরিকের প্রতি যে অবিচার করা হলো তাতে ভবিষ্যতে নাগরিকগণ আদালতের উপর থেকে আস্থা হারাতে পারেন।
শহীদ মুজাহিদ একজন আপোষহীন নেতা ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে তার মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনার পর ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক ও আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ছিলাম। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের নির্দেশ দিয়ে বললেন “ আমি কোন অন্যায় করিনি। সুতরাং মাথা নত করার প্রশ্নই আসেনা। আল্লাহ আমার মৃত্যুর জন্য যে সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন ঠিক ঐ সেই সময়ই আমার মৃত্যু হবে। আমি সরকারের সাথে আপোষ করে কারাগার থেকে বের হবার সময় কারা গেট অতিক্রমের সময়ও আমার মৃত্যু হতে পারে। আর সেটা যদি হয় ঐ মৃত্যু হবে মুনাফিকের মৃত্যু। আমি মুনাফিকের মৃত্যু চাইনা।আমি শহীদি মৃত্যু চাই।”
তিনি প্রায়ই বলতেন এ দেশের জন্য জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির এক বড় নেয়ামত। তিনি আরও বলতেন ইসলামই এ জাতির ভবিষ্যত।
শহীদ মুজাহিদকে একুশে আগষ্টের গ্র্যানেড হামলার মামলায় আসামী করা হয়েছিল। এ মামলার শুনানীকালে তাকে নিয়মিত আদালতে হাজির করা হতো। এ সময় তার সাথে ঘনঘন সাক্ষাত হতো। তিনি বলতেন আমাদেরকে হত্যা করা সম্ভব হলেও ইসলামী আন্দোলনকে হত্যা করা যাবেনা। আমাদেরকে শহীদ করা হলে এ রক্ত শাসক দলের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের রক্তের উপর আল্লাহর দ্বীনের বিজয় হবে। ইনশাআল্লাহ।
মহান রাব্বুল আলামীন শহীদ মুজাহিদ ভাইয়ের শাহাদতকে কবুল করুন।তার রক্তের বিনিময়ে এ দেশে দ্বীনকে বিজয়ী করুন। আমীন।।
লেখকঃ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।